সঞ্জয় কুমার কর্মকার ।। শীতের আমেজ আসতে না আসতেই খেজুর গুড়ের রাজধানী খ্যাত যশোরের বিভিন্ন এলাকায় পুরোদমে চলছে রস আহরণের প্রস্তুতি। ইতোমধ্যেই খেজুর গাছ কাটা শুরু করেছেন গাছিরা। বিভিন্ন অঞ্চলে এখন গাছিরা ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন খেজুরের রস আহরণের পূর্ব প্রস্তুতিতে। প্রকৃতির পালাবদলে এখন প্রভাতে শিশির ভেজা ঘাস আর সামান্য কুয়াশার আবরণ জানান দিচ্ছে শীত এসেছে। কথায় আছে “যশোরের যশ’ খেজুরের রস”তাই শীতের মৌসুম শুরু হতে না হতেই গাছ থেকে রস আহরণের পূর্ব প্রস্তুতি শুরু হয়েছে যশোর অঞ্চল ঘুরে দেখা যায়। গাছিরা খেজুর গাছ প্রস্তুত করতে ব্যস্ত হয়ে উঠেছে। রস সংগ্রহের জন্য পূর্ব প্রস্তুতি হিসাবে খেজুর গাছের আগায় বিশেষ পদ্ধতিতে কাটাকুটি বা ‘তোলা দেওয়ার কাজ চলছে। ধারালো দা (গাছি দা) দিয়ে খেজুর গাছের মাথার সোনালি অংশ বের করা হয়। যাকে যশোরের ভাষায় বলে,গাছ তোলা হয়।
৮ থেকে ১৪ দিন পর নোলন স্থাপনের মাধ্যমে শুরু হবে সুস্বাদু খেজুর রস আহরণের মূল কাজ। তার কিছুদিন পরই গাছে লাগানো হবে মাটির পাতিল। সংগ্রহ করা হবে মিষ্টি স্বাদের খেজুরের রস। তা দিয়ে তৈরি হবে লোভনীয় গুড় ও পাটালি। যশোর জেলার বিভিন্ন উপজেলাসহ আশপাশের অঞ্চলগুলোর বেশির ভাগ গ্রামে এখনও চোখে পড়ে খেজুর গাছের বিশাল সমারোহ। জমির আইলে ও পতিত জায়গায় অসংখ্য খেজুর গাছ লাগিয়েছেন এলাকার কৃষকরা। বিশেষ করে সদর উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা মেলে এ দৃশ্য বাঘারপাড়া,অভয়নগর,মণিরামপুর, কেশবপুর,ঝিকরগাছা,চৌগাছা,শার্শা,বেনাপোলসহ বিভিন্ন এলাকার গ্রামজুড়ে রয়েছে বিপুলসংখ্যক খেজুর গাছ। খেজুরের রস আহরণের মধ্য দিয়েই এ গ্রামীণ জনপদে শুরু হয় শীতের আমেজ।
শীত যত বাড়বে,খেজুর রসের মিষ্টিও তত বাড়বে। শীতের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ দিনের শুরুতে খেজুরের রস,সন্ধ্যা রস ও সুস্বাদু গুড়-পাটালি। শীত মৌসুমে যশোর অঞ্চলের বিভিন্ন বাড়িতে বাড়িতে খেজুুরের রস জ্বালিয়ে পিঠা-পায়েসসহ নাম না জানা হরেক রকমের মুখ-রোচক খাবার তৈরির ধুম পড়ে। সুস্বাদু পিঠা ও পায়েস তৈরিতে আবহমান কাল ধরেই গ্রামবাংলার প্রধান উপকরণ খেজুরের গুড়। খেজুরের রস বিক্রি ও গুড় তৈরির কাজও এ এলাকার অনেক কৃষকের প্রধান শীতকালীন পেশা। এখন যেন চলছে তারই পূর্ব প্রস্তুতি।
খাজুরা গ্রামের গাছি রহমান আলীর কাছে জানতে চাইলে প্রতিদিনের কাগজ প্রতিবেদক-কে তিনি বলেন,প্রথমে খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহের জন্য বিশেষ পদ্ধতিতে গাছের আগা কাটা হয়। মৌসুমের শুরুতে ব্যাপক তোড়জোড় শুরু হওয়ায় একা সম্ভব হয় না। গাছের আগা কাটার জন্য গাছিদের ৪০০ থেকে ৫৫০ টাকা মজুরি দিয়ে গাছ কাটাতে হয়।
এছাড়া তিনি আরোও বলেন,রস সংগ্রহের সময় অর্থাৎ শীত মৌসুমের পুরো চার মাসজুড়ে বাড়িতে খেজুরের গুড় ও পাটালি তৈরি করা হয়। ওই সময় আমাদের প্রতিদিন আয় হয় এক থেকে দুই হাজার টাকা। অনেকের আবার খেজুর গাছ কেটেও সংসার চলে। এ মৌসুমে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকারি ব্যবসায়ীরা খাজুরা রূপদিয়া,বসুন্দিয়া,ছাতিয়ানতলা,মণিরামপুর কেশবপুর ও রাজগঞ্জ বাজারে গুড়ের হাটে হাজির হয়। জেলার সবচেয়ে বড় খেজুর গুড়ের হাট বসে রূপদিয়া, মণিরামপুর কেশবপুর ও রাজগঞ্জে। তারা এসব হাট থেকে খেজুরের গুড় ও পাটালি কিনে সারা দেশে সরবরাহ করেন। এখানকার কারিগরদের পাটালি তৈরিতে সুনাম থাকায় খেজুরের গুড়-পাটালির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে দেশের অন্যান্য জেলায় এমনকি দেশের বাইরেও। অনেক ব্যবসায়ী সরাসরি গাছিদের কাছে অর্ডার দিয়ে পাইকারি মূল্যে কিনে দেশের বাইরেও সরবরাহ করে থাকেন যশোরের সুস্বাদু এই গুড়-পাটালি।
উক্ত বিষয়ে যশোর সদর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো: হাসান আলীর কাছে জানতে চাইলে আমাদেরবাংলাদেশ ডটকমের প্রতিবেদক-কে তিনি বলেন,এ উপজেলায় মোট খেজুর গাছের সংখ্যা ১লক্ষ,৩৬ হাজার ৩৪৭টি। এরমধ্যে মোট ফলন্ত (রস দেওয়া) গাছের সংখ্যা ১লক্ষ,২০ হাজার ৫২০টি।
আমাদেরবাংলাদেশ ডটকম/ শিরিন আলম